সুজাউদ্দিন খাঁ ছিলেন বাংলার নবাব। তাঁর পিতার
নাম ছিল নবাব জান মু্হাম্মদ খান। ১৬৭০ সালে বুরহানপুরে (বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত)
জন্মগ্রহণ করেন। বুরহানপুরে তাঁর প্রথম জীবনে সরকারী কাজে হাতে খড়ি হয়। এখানে মুর্শিদকুলি খান-এর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। অল্পদিনেই তিনি মুর্শিদকুলি খান-এর বিশেষ স্নেহভাজন হয়ে
পড়েন। সেই সূত্রে মুর্শিদকুলি খান তাঁর কন্যা জিন্নাত উন্নেসা বা আজমত উন্নেসার সঙ্গে
সুজাউদ্দিনের বিয়ে দেন।
১৭১৯ সালে সুজাউদ্দিনকে উড়িষার সুবাদার পদে
নিযুক্ত করেন মুর্শিকুলি খাঁ। সুজাউদ্দিন ছিলেন খুব লম্পট প্রকৃতির। স্বামীর ইন্দ্রিয়
লালসা ও ব্যভিচারে বিরক্ত হয়ে জিন্নাত উন্নেসা উড়িষা ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে মুর্শিদাবাদে
চলে আসেন। সুজাউদ্দিনের এই ধরনের কার্যকলাপে মুর্শিদকুলি খানও তাঁর উপর বিরক্ত হয়েছিলেন।
১৭২৭ সালে মুর্শিদকুলি খান অপুত্রক অবস্থায়
মৃত্যুবরণের আগে, সুজাউদ্দিন খাঁ-এর পরিবর্তে তিনি তাঁর নাতি সরফরাজ খানকে (সুজাউদ্দিন
খাঁ-এর পুত্র) সিংহাসনের উত্তরাধিকার করে যান। এই মনোনয়নকে তিনি মেনে নিতে পারেননি।
ফলে তিনি কৌশলে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার সুবেদারি পদের অনুমতি গ্রহণ করেন।
এই সময় তাঁর বিশেষ পরামর্শদাতা ছিলেন আলিবর্দি খান ও তাঁর ভাই হাজী আহম্মদ। উভয়ের পরামর্শে
তিনি তাঁর অন্য পুত্র মহম্মদ তকি খাঁকে উড়িষার শাসন ভার দিয়ে সসৈন্যে মুর্শিদাবাদের
পথে রওনা দেন। পিতার এই আচরণে সরফরাজ বিস্মিত হন। গৃহবিবাদের আশঙ্কার কারণে মা ও মাতামহীর
পরামর্শে তিনি পিতার কাছে সিংহাসন হস্তান্তর করেন।
সিংহাসন দখলের পর তিনি পুত্র সরফরাজ খাঁকে
দেওয়ানের পদে ও গুরুত্বপূর্ণ পদ নিকট আত্মীয়
এবং ঘনিষ্ট বন্ধুদের দান করে সিংহাসন নিশ্চিত করেন। এরপর দিল্লির সম্রাটকে নানা ধরনের
উপঢৌকন পাঠান। দিল্লির সম্রাট সন্তুষ্ট হয়ে 'মুতাসন্-উল-মুলক-সুজা-উদ্-দৌলা আসাদ জঙ্গ'
উপাধি দেন। মুর্শিদকুলি খান-এর সময় হিন্দু জমিদারদের উপর যে বাড়তি চাপ দেওয়া হয়েছিল,
তিনি তা হ্রাস করে ওই সকল জমিদারদের আস্থা অর্জন করেন। এছাড়া বিদ্রোহী জমিদারদের কঠোর
হাতে দমন করেন। তাঁর সময় মোগল সম্রাট 'বিহার'কে বাংলার সাথে যুক্ত করার অনুমতি দেন।
ফলে সুজাউদ্দিন খাঁ বাংলা-বিহার-উড়িষার নবাবে পরিণত হন।
সুজাউদ্দিন
চেহেল সেতুন প্রাসাদকে বড়ো করেন এবং অনেকগুলি বাগ-বাগিচা নির্মাণ করান। ত্রিপোলিয়া
গেট তিনিই নির্মাণ করেছিলেন। নদীর ওপারে রোশনীবাগ নামে প্রমোদ উদ্যান এবং একটি মসজিদ
নির্মাণ করান। সুজাউদ্দিন ছিলেন খুব শৌখিন নবাব। ফার্হাবাগে নানারকমের দেশি-বিদেশি
ফুল ফলের গাছ এনে অসংখ্য ফোয়ারা জলাধার দিয়ে তৈরি করেন এক প্রমোদ বাগান। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে
সুন্দরী রমনীদের সঙ্গে জলক্রীড়ায় মাততেন নবাব। জীবনের শেষভাগে তিনি মন্ত্রীদের উপর
রাজ্যশাসনের ভার দিয়ে বিলাসীভাবেই জীবন কাটিয়েছেন।
২৬
আগস্ট ১৭৩৯ সালে তিনি মৃত্যুবরন করেন। তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যা রেখে যান। তাঁকে
মুর্শিদাবাদের রোশনিবাগে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র সরফরাজ খান নবাবী
সিংহাসনে বসেন।
No comments:
Post a Comment