আলিবর্দি খাঁ বাংলা, বিহার, ওড়িষার নবাব ছিলেন। প্রকৃত নাম মির্জা মুহাম্মদ আলি। তিনি ১৭৪০ সাল থেকে ১৭৫৬ সাল পর্যন্ত নবাব ছিলেন। আলিবর্দি খাঁর বাবা ছিলেন আরব দেশীয় এবং মা তুর্কি। তার পিতার নাম ছিল মির্জা মুহাম্মদ। আরব বংশোদ্ভূত মির্জা মুহাম্মদ আজম শাহের (আওরঙ্গজেবের দ্বিতীয় পুত্র) দরবারের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। মির্জা মুহাম্মদের দুই পুত্র - মির্জা আহম্মদ ও মির্জা মুহাম্মদ আলি। মির্জা মুহাম্মদ আলির পূর্ণ বয়স্ক হবার সঙ্গে সঙ্গে আজম শাহ তাকে পিলখানার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৭০৭ এর যুদ্ধে আজম শাহের মৃত্যুর পর চাকরি চলে যাওয়ার মির্জা মুহাম্মদ আলির পরিবার সমস্যার সম্মুখীন হয়। তখন, বাকি জীবনের জন্য তিনি সপরিবারে ১৭২০ সালে বাংলায় চলে আসেন।
তিনি বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর জামাতা সুজাউদ্দিনের দরবারের পারিষদ ও পরে একটি জেলার ফৌজদার নিযুক্ত হন। ১৭২৭ সালে মুর্শিদকুলি খাঁর মৃত্যুর পর তিনি ও তাঁর অগ্রজ হাজি আহম্মদের বুদ্ধিতে সুজাউদ্দিন বাংলার মসনদে বসেন। খুশি হয়ে সুজাউদ্দিন তাঁকে ‘আলিবর্দি’ উপাধি দিয়ে রাজ্যের ফৌজদার নিযুক্ত করেন। ১৭৩৩ সালে বিহার বাংলার সঙ্গে যুক্ত হলে তিনি বিহারের নায়েব সুবা পদে অভিষিক্ত হন। ১৭৩৯ সালে সুজাউদ্দিনের মৃত্যুর পর নবাব হন তাঁর পুত্র সরফরাজ খাঁ। কিন্তু বিহারের সুবেদার আলিবর্দী খাঁ তখন অপরিসীম শক্তি ও সামর্থ্যর অধিকারী। অমাত্যবর্গও তাঁর অনুগত। অবশেষে ১৭৪০ সালের ৯ই এপ্রিল মুর্শিদাবাদের কাছে গিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজ খাঁকে পরাজিত করে আলিবর্দি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব নিযুক্ত হন।
আলিবর্দি খাঁ ছিলেন অত্যন্ত সুদক্ষ শাসক। তিনি শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক যোগ্য ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেন। বর্গিদের অত্যাচারে দেশের মানুষ যখন অতিষ্ট তখন তিনি কঠিন হাতে তাদের দমন করেন। বর্গি প্রধান ভাস্কর পন্ডিতসহ তেইশজন নেতাকে তিনি কৌশলে হত্যা করেন এবং বর্গিদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করেন। একইভাবে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বিবেচনায় রেখে ইউরোপীয় বণিকদের উচ্ছেদ না করে কৌশলে তাদের দমিয়ে রাখেন। এভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে তিনি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
আলিবর্দি খাঁর কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। তিন কন্যা ঘসেটি বেগম (মেহেরউননেসা), শাহ বেগম ও আমিনা বেগমকে তিনি তাঁর ভাই হাজি মুহম্মদের তিন পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দেন। আশি বছর বয়সে বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দি ১০ই এপ্রিল ১৭৫৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ছোট মেয়ে আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব নিযুক্ত হন। সিরাজ ছিলেন আলিবর্দির অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। আলিবর্দির ইচ্ছা অনুযায়ী সিরাজ নবাব হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।
No comments:
Post a Comment