'সোঁদামাটি' সাহিত্য পত্রিকা ও 'ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ' ফেসবুক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে এই ওয়েবসাইট।

নবাব সরফরাজ খাঁ


সরফরাজ খাঁ ছিলেন বাংলার নবাব। তাঁর প্রকৃত নাম মির্জা আসাদুল্লাহ। পিতার নাম নবাব সুজাউদ্দিন খাঁ। মায়ের নাম জিন্নাত উন্নেসা (নবাব মুর্শিদকুলি খানের কন্যা)। নানা কারণে জামাতা সুজাউদ্দিনের  প্রতি মুর্শিদকুলি খান বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। ১৭২৭ সালে মুর্শিদকুলি খান অপুত্রক অবস্থায় মৃত্যুবরণের আগে, সুজাউদ্দিন খাঁ-এর পরিবর্তে তিনি তাঁর নাতি সরফরাজ খানকে (সুজাউদ্দিন খাঁ-এর পুত্র) সিংহাসনের উত্তরাধিকার করে যান। এই মনোনয়নকে সুজাউদ্দিন খাঁ মেনে নিতে পারেননি। ফলে তিনি কৌশলে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার সুবেদারি পদের অনুমতি গ্রহণ করেন। এই সময় তাঁর বিশেষ পরামর্শদাতা ছিলেন আলিবর্দি খাঁ ও তাঁর ভাই হাজী আহম্মদ। উভয়ের পরামর্শে তিনি তাঁর অন্য পুত্র মহম্মদ তকি খাঁকে উড়িষার শাসন ভার দিয়ে সসৈন্যে মুর্শিদাবাদের পথে রওনা দেন। পিতার এই আচরণে সরফরাজ বিস্মিত হন। গৃহবিবাদের আশঙ্কার কারণে মা ও মাতামহীর পরামর্শে তিনি পিতার কাছে সিংহাসন হস্তান্তর করেন।

১৭৩৯ সালে সুজাউদ্দিন খাঁ-এর মৃত্যুর পর সরফরাজ খাঁ বাংলা-বিহার-উড়িষার নবাব হন। কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন - তাঁর মধ্যে ধর্মের বাহ্যিক আড়ম্বর থাকলেও তিনি বাপের মতো স্ত্রীপরায়ণ ও লম্পট ছিলেন। তিনি হারেমে ১৫০০ জন স্ত্রীলোক এবং মসজিদে কয়েকশো বেতনভোগী মোল্লা রেখেছিলেন। রাজ্য শাসনের বিষয়ে তিনি অনভিজ্ঞ ছিলেন। ফলে কিছুদিনের মধ্যে রাজ্যের প্রদেশিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। এই সূত্রে আলিবর্দি খাঁ এবং তাঁর ভাই হাজী আহম্মদ বাংলার মসনদ দখল করার ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। এই ষড়যন্ত্রে উৎসাহ দেন আলম চাঁদ, জগৎশেঠ-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। আলিবর্দি খাঁ গোপনে দিল্লীর সম্রাটের অনুচরদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেন। পরে সম্রাটকে পর্যাপ্ত রাজস্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করে, রাজ্য শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশনামা দিল্লীর দরবার থেকে আদায় করেন। এর ভিতরে তিনি জোরপূর্বক বাংলার মসনদ দখল করার জন্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধিও করেন। 

অবশেষে তিনি ২৯ এপ্রিল ১৭৪০ সালে সরফরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মুর্শিদাবাদের ২২ মাইল উত্তর-পশ্চিমে গিরিয়া নামক স্থানে উভয় সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে সরফরাজ পরাজিত ও নিহত হন। সরফরাজ খাঁ মৃত্যুর সময় পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যা রেখে যান। এরপর বিনা বাধায় আলিবর্দি খাঁ মুর্শিদাবাদ দখল করেন এবং তিনি বাংলা ও বিহারে অধিকার লাভ করেন। আলিবর্দি খাঁ বাংলার নবাব হিসেবে অভিষিক্ত হন ও একই সাথে মুর্শিদকুলির নাসিরি রাজবংশের পতন ঘটে। আলিবর্দি খাঁ আফসার রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। সরফরাজ খাঁ-কে মুর্শিদাবাদের নাগিনাবাগে সমাধিস্থ করা হয়।
ফৌতি মসজিদ সরফরাজ খাঁ-এর একমাত্র নির্মাণ কীর্তি। যুদ্ধে হঠাৎ মারা যাবার জন্য এই মসজিদ তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।


শেয়ার করুন

No comments:

Post a Comment