'সোঁদামাটি' সাহিত্য পত্রিকা ও 'ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ' ফেসবুক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে এই ওয়েবসাইট।

রুপচাঁদ অধিকারী ও ঢপকীর্ত্তন

রুপচাঁদ অধিকারীর বাড়ি

রাধা-কৃষ্ণের লীলাবিষয়ক  আধ্যাত্মিক মাহাত্ম সংগীতকে এককথায় কীর্ত্তন গান বলে। এই কীর্ত্তনাঙ্গের এক অন্যতম ধারা হল ঢপকীর্ত্তন।  ঢপকীর্ত্তনের শ্রেষ্ঠ গায়ক ছিলেন রুপচাঁদ অধিকারী। তাঁকে অনেকে ঢপকীর্ত্তন গানের প্রবর্তক বলেন। ১৭২২ সালে সুগায়ক রুপচাঁদের জন্ম হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গার দক্ষিণপাড়ায়। 

মুর্শিদাবাদের তালিবপুর থেকে এসে রুপচাঁদের পিতা প্রাণকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় মামার সম্পত্তি পেয়ে বেলডাঙ্গাতে বসবাস শুরু করেন। এখানে এসে গুরুগিরি শুরু করলে নাম হয়ে যায় প্রাণকৃষ্ণ অধিকারী। প্রাণকৃষ্ণের আটটি ছেলের মধ্যে রুপ চাঁদ ছিল সকলের বড়ো। ছেলেবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তাঁর নেশা ছিল প্রবল। গলার কন্ঠস্বরও ছিল সুমিস্ট। পাঠশালার শিক্ষা শেষ করে রুপচাঁদ টোলে সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করেন এবং কিছুদিন ভাগবতের কথকতাও করেছিলেন। ওই সময় সংগীতের প্রতি আরও অনুরাগ জন্মায়। তাঁর ভাইদের মধ্যে কয়েকজন গান বাজনা জানতেন। 

কথিত আছে, রুপচাঁদ একদিন বাড়িতে পাকোয়াজ নিয়ে গান গাইছিল। হঠাৎ তাঁর গান বেসুরো ও বেতালা হয়ে যায়। এমন সয়য় তাঁর ছোট ভাই জগদুর্লভ পায়ের খড়ম দিয়ে দাদার পিঠে মেরেছিল। ভাই-এর হাতে মার খেয়ে রুপচাঁদ বাড়ি ছেড়েছিলেন। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ভালভাবে গান না শিখে তিনি বাড়ি ফিরবেন না। সাত বছর তিনি বেলডাঙ্গায় আসেন নি। 

মুর্শিদাবাদের সালারের কাছে সিমুলিয়া গ্রামে এক সাধু ভাল সংগীত জানতেন। তাঁর কাছে প্রচলিত প্রথামত কয়েক বছর সংগীত শিক্ষা লাভ করেন। রুপচাঁদের গানে সন্তুষ্ট হয়ে সাধু নিজের ডুবকীখানি রুপচাঁদকে পুরস্কার দেন। ডুবকী বাজিয়ে রুপচাঁদ হাটে বাজারে যেখানেই গান গাইতো তাঁর কন্ঠস্বর ও সুরমাধুর্য্যে লোকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ত। তাঁর গান শুনে ডাকাতেররাও দস্যুবৃত্তি ছেড়ে সেকালে অনেকে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল। শোনা যায়, একরাতে রুপচাঁদ দলবল নিয়ে গান সেরে বাড়ি ফিরছিল। বেলডাঙ্গার ভাগিরথীর ওপারে আলিকপুর মাঠে একদল ডাকাত তাঁদের ঘিরে ধরলে রুপচাঁদ তাঁর কন্ঠের জাদুবলে ডাকাত সর্দার নয়না দাসকে বিমোহিত করেছিল। সে ডাকাত বৃত্তি ত্যাগ করে রুপচাঁদের শিষ্যত্ব নিয়েছিল। নয়না দাস আলিকপুর গ্রামে বাস করতো।

রুপচাঁদের সংগীত খ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে সুদূর বিহার পর্যন্ত প্রসার লাভ করেছিল। 

রুপচাঁদের জীবিতকালে বেলডাঙ্গার জমিদার ছিলেন জগৎ শেঠ ফতেচাঁদ ও তাঁর বংশধরেরা। জগৎ শেঠ পরিবার রুপ চাঁদের গান শুনে খুশী হয়ে তাঁকে অনেক নিষ্কর জমি ও পাকাবাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ১৮০৪ সালে বিরাশি বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন।  রুপচাঁদের তিনটি পুত্র সন্তান ছিল। কিন্তু তাঁর বংশের এখন কেউ নেই। তবে ভাইদের বংশধরেরা এখনও বেলডাঙ্গায় বসবাস করছে।

{ তথ্য সংগ্রহ : দীননাথ মণ্ডল  }



শেয়ার করুন

No comments:

Post a Comment