চিনির মিল, বেলডাঙা (Sugar Mill, Beldanga)
সালটা ১৯৪৭। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। দ্বিজাতি
তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে নোটিফিকেশন জারি করে
দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। কারণ মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে
চলেছে। এভাবেই বন্ধ হয়ে পড়ে বেলডাঙ্গা শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিল।
১৯৩৩ সালে
শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিলস্ লিমিটেড বেলডাঙ্গাতে চামড়ার ট্যানারীর কারখানাকে
সংস্কার করে এই সুগার মিল চালু করে। কারখানার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিল
ইংল্যান্ড থেকে। মিলের প্রয়োজনীয় আখের বেশী ভাগ আসত অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলা
থেকে। এছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ ১৯৩৬ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর, মাদাপুর, বানজেটিয়া, জীবননগর ও
বহরমপুরে মোট ৪৭২.১ একর এবং নদীয়া জেলায় বেথুয়াডহরীতে ৪০৪.৭ একর জমি কেনে আখ চাষের
জন্য। উল্লেখ্য ১৯০০ সালের দিকে নীল চাষের অবসানের পর দাদপুর, সুজাপুরের
নীল চাষের জন্য ব্যবহৃত এক বিশাল পরিমাণ জমিতে আখ চাষ হতে থাকে। ভাগিরথীর
পার্শ্ববর্তী পলিমিশ্রিত উর্বর জমি ছিল আখ চাষের পক্ষে অনুকূল। নীলকরদের দাদনের দেনার দায় থেকে স্বস্তি
পেয়েছিল চাষিরা। কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পেয়েছিল তারা আখ চাষ করে। চিনির মিলে কাজ
করার জন্য অল্প বেতনে পর্যাপ্ত শ্রমিকও ছিল। রমরমিয়ে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। ১৯০৫
সালে রানাঘাট-লালগোলা লাইন তৈরি হয়। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল অনুকূল। পাতা হয়
রেললাইন মিলের ভেতর পর্যন্ত। উৎপাদিত চিনি সহজেই পৌঁছে যায় কলকাতায়। তাছাড়া সড়কপথ
ও ভাগিরথী নদীর জলপথ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল। এখানকার উৎপাদিত চিনি কলকাতা, ভারতের
বিভিন্ন জায়গা এমনকি ইংল্যান্ড সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সমান জনপ্রিয় ছিল।
আজ যেমন বেলডাঙাকে সারা রাজ্যের মানুষ একবাক্যে
চেনে এখানকার কাঁচা লঙ্কা আর বিখ্যাত হাটের জন্য। ঠিক ব্রিটিশ আমলে চিনত
শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিলের জন্য। সুগার মিলকে কেন্দ্র করে বেলডাঙার শ্রীবৃদ্ধি
ঘটতে থাকে। ক্রমে ব্যবসা-বাণিজ্যর ক্ষেত্র গড়ে উঠে। চিনির মিল ও হাট বেলডাঙার
অর্থনীতির সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
দীর্ঘ ১৪ বছর চলার পর ১৯৪৭ সালে তেতো হয়ে যায়
চিনির স্বাদ। কাজ হারায় অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে
মিল কর্তৃপক্ষ নিজেকে দেওলিয়া ঘোষনা করে। লিকুডেশনে কলকাতা হাইকোর্ট
রিসিভার নিয়োগ করে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারের পক্ষে কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কিনে নেয়
এবং সরকারিভাবে চলানোর উদ্যোগ নেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল সুগার ডেভেলপমেন্ট করপরেশন
লিমিটেড। নাগপুর থেকে কারখানা বিশেষজ্ঞরা এসে পরিকাঠামো প্রদর্শন করেন। কিন্তু
উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে সেই প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য মিলের
যন্ত্রাংশের বেশিরভাগ সেই সময় সরিয়ে ফেলা হয়। আখ চাষের জন্য মিলের কেনা জমিও বেদখল
হয়ে যায়। পড়ে থাকে অন্তসারশূন্য এক বিশাল মিলের কাঠামো।
কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ পাট শিল্পের জন্য ১৯৯৩
সালে চাপদানি কোম্পানিকে এই চিনির মিল বিক্রি করে দেয়। চাপদানি কোম্পানি UNDP মাধ্যমে
কাঁচা পাট ছাড়িয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাঁক দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে, কিন্তু তা
ব্যর্থ হয়। বর্তমানে মিলের মধ্যে পরিত্যক্ত কিছু জমিতে র্যামির ফাইবার চাষ হয় এবং
এই সংক্রান্ত ছোট একটি প্রসেসিং ইউনিটও আছে মিলের অফিস ভবনে। তন্তু উৎপাদন করে
সেখান থেকে সুতো তৈরি করা হয়। কিন্তু এই
প্রক্রিয়া নামমাত্র। মিলের মূল ভবন বর্তমানে পরিণত হয়েছে ঝোপ জঙ্গলে। প্রাচীর ঘেরা
একটা বিশাল এলাকায় কিছু আগাছা বুকে নিয়ে একটি তামার চিমনী মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে
বেলডাঙ্গা রেলস্টেশনের সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব দিকে ধ্বংসের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে।
জানিনা এই অসহায় মিলটা কারো সহায়তায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে কিনা? আপতত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে
বেলডাঙার মানুষ।
( তথ্য সংগ্রহ ও লেখক : দীননাথ মণ্ডল )
|
Amra chai eta notun Kore chalu hok...
ReplyDeleteAt least jekono industry..
Akdom thik bolechen
ReplyDeleteAkdom thik bolechen
ReplyDelete