বাংলার প্রথম নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। আনুমানিক ১৬৬৫ সালে দাক্ষিণাত্যের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। অভাবের তাড়নায় বাল্যকালে তার পিতা তাঁকে ক্রীতদাস হিসাবে বিক্রি করে দেন হাজি সফি নামে এক পারসিক ব্যবসায়ীর কাছে। হাজি সফি বালককে নিয়ে যান পারস্যের ইস্পাহানে। সেখানে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে নতুন নাম দেন মহম্মদ হাদি। নিজের ছেলেদের সঙ্গে মহম্মদ হাদিকেও লেখাপড়া শেখান হাজি সফি। হাজি সফির মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেরা মহম্মদ হাদিকে ক্রীতদাস জীবন থেকে মুক্তি দেন। অত:পর যুবক মহম্মদ হাদি ভারতে দাক্ষিণাত্যের ফিরে আসেন। সেখানে সুবে বেরারের দেওয়ান হাজি আব্দুলার কাছে রাজস্ব বিভাগের কাজে যোগদান করেন এবং কাজে বিশেষ পারদর্শিতা দেখান। মহম্মদ হাদির এই পারদর্শিতার কথা মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব জানতে পেরে তিনি তাঁকে হারদারবাদের দেওয়ান হিসাবে নিযুক্ত করেন এবং মনসবদারি পদ প্রদান করেন।
১৭০০ সালে মহম্মদ হাদিকে সম্মানসূচক 'করতলব খান' উপাধি দিয়ে সম্রাট ঔরঙ্গজেব দেওয়ান হিসেবে বাংলায় পাঠান। নতুন নিয়োগ পেয়ে করতলব খান ঢাকায় পৌঁছেন। তিনি রাজস্ব ও অর্থনৈতিক প্রশাসনে স্বীয় যোগ্যতার পরিচয় দেন। তিনি ছিলেন সৎ এবং সম্রাটের অত্যন্ত বিশ্বস্ত। কিন্তু রাজকীয় স্বার্থ রক্ষা করতে বাংলার নাজিম ও সম্রাটের দৌহিত্র আজিমুদ্দীনের (পরবর্তী সময়ে আজিম-উস-শান) সঙ্গে তাঁর বিবাদ বাঁধে। ফলে করতলব খানের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়। সম্রাটের হস্তক্ষেপে করতলব খানের প্রতি সুবিচার করা হয়। ১৭০২ সালে সম্রাট তাঁকে গঙ্গার তীরবর্তী (ভাগীরথী শাখা) মখসুদাবাদে দফতর স্থানান্তরের অনুমতি দেন। অন্যদিকে সম্রাট তাঁর দৌহিত্রকে পাটনায় প্রেরণ করেন এবং নায়েবের মাধ্যমে প্রদেশ শাসনের আদেশ দেন। করতলব খানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। ১৭০৩ সালে তিনি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দাক্ষিণাত্য যান এবং এ সাক্ষাতে তিনি ‘মুর্শিদকুলী খান’ উপাধি লাভ করেন। সম্রাট তাঁকে অনুমিত দেন নিজের নামে শহরের নাম রাখতে। ১৭০৪ সালে দাক্ষিণাত্য থেকে ফিরে মুর্শিদকুলি খান মুখসুদাবাদ শহররের নাম রাখেন মুর্শিদাবাদ।
১৭০৭ সালে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুগল সাম্রাজ্যে গোলযোগ শুরু হয় এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে সাম্রাজ্য ধ্বংস হবার উপক্রম হয়। সে সময় অনুপস্থিত নাজিমের পক্ষে তাঁর প্রতিনিধি (নায়েব) বাংলার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। বাহাদুর শাহের রাজত্বকালে মুর্শিদকুলি খানকে দাক্ষিণাত্যে বদলি করা হয়। তবে দুবছরের মধ্যেই ১৭১০ সালে তাঁকে আবার ফেরত আনা হয়। ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফররুখ সিয়ার এর নাবালক পুত্র ফরখুন্দ সিয়ারের পক্ষে ডেপুটি সুবাহদার নিযুক্ত হন। তাঁর মৃত্যুর পর তিনি অনুপস্থিত সুবাহদার মীরজুমলার ডেপুটি সুবাহদার হন। মীরজুমলা মুর্শিদাবাদে অবস্থান করতেন। মুর্শিদকুলি খান ঢাকায় সর্বোচ্চ পদমর্যাদার অফিসার হওয়ায় প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তাঁর হাতেই ছিল। বাংলার জন্য এটা সৌভাগ্য যে, মুর্শিদকুলি খান এই প্রদেশকে সব রকমের বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হন।
১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলি খান বাংলার নাজিম পদে উন্নীত হন। তিনি অসংখ্য উপাধি ও পদবিতে ভূষিত হন। প্রথমে তিনি ‘জাফর খান’ উপাধি পান এবং পরে তাঁকে ‘মুতামিন-উল-মুলক আলা-উদ-দৌলা জাফর খান নাসিরী নাসির জঙ্গ বাহাদুর' উপাধি দেওয়া হয়। তাঁকে সাত হাজারি মনসব প্রদান করা হয়। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যু হয়। কাটরা মসজিদের সিঁড়ির নিচে তাঁর কবর রয়েছে।
Very good site and tha2
ReplyDeleteAnek dhonnobad
ReplyDelete