'সোঁদামাটি' সাহিত্য পত্রিকা ও 'ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ' ফেসবুক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে এই ওয়েবসাইট।

বেরা ভাসান - নবাবী আমলের উৎসব‬


বেরা ভাসান হল মুর্শিদাবাদে নবাবের আমল থেকে হয়ে আসা একটি আলোকদান উৎসব। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে প্লাবনে কানায় কানায় ভর্তি ভাগিরথী নদীর বুকে এই আলোক উৎসব হয়। কলাগাছের ভেলা তৈরি করে রঙ বেরঙের কাগজ, মোমবাতি, প্রদীপ দিয়ে সুসজ্জিত করে খোয়াজ খিজিরের উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। খোয়াজ খিজির হলেন জলের দেবতা।

নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ মুর্শিদাবাদে এই উৎসবের সূত্রপাত করেন। ১৭০৪ সালে বাংলা-বিহার-ওড়িশার সুবেদার হিসেবে মুর্শিদকুলি খাঁ মুর্শিদাবাদে আসার পর থেকেই প্রতি বছর নিয়ম করে দিল্লির মসনদে বাৎসরিক কর সংগ্রহ করে পাঠাতেন। মালপত্র বজরায় তুলে নিয়ে নদী পথ দিয়েই ওই যাত্রার শুরু হতো। ওই বজরার যাত্রা শুরুর মুহূর্তে তোপ দাগা হত। ওই যাত্রাপথ মঙ্গলময় করতেই বেরা উৎসবের সূচনা।

মুর্শিদকুলির আমলে বেরা উৎসবের ভেলাটি তিনশো হাত লম্বা ও দেড়শো হাত চওড়া হতো। এখন আর এতো বড়ো হয় না। কলাগাছের ভেলার উপর বাঁশ দিয়ে মসজিদের কাঠামো তৈরি করে বিভিন্ন রঙিন কাগজ দিয়ে সেটাকে সাজিয়ে তোলা হতো। ছোট ছোট মাটির প্রদীপ কপূর দিয়ে প্রজ্বলিত করে ভেলা ও মসদিজের কাঠামোকে আলোর রোশনায় সাজানো হতো। এক বর্ণাঢ্য মিছিল সহকারে খোয়াজ খিজিরের সির্নী বেরার উপর আনা হতো। বেরার উপর সোনা ও রূপার প্রদীপ জ্বালিয়ে মনস্কামনা পূরণের জন্য খোয়াজ খিজিরের উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। নদীর পাড়ে শুরু হতো আতশবাজি পোড়ানো, এখনও হয়। নবাবী নৌকা বজরা সহ সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ধরনের বজরা আলোক সজ্জায় সজ্জিত হয়ে এই উৎসবে যোগ দিত। নদীর দু'পাড়ে অসংখ্য মানুষ এই দৃশ্য উপভোগ করতো, আজও করে।

বেরা উৎসবের প্রথম সূত্রপাত ঘটে মুকাররম খাঁ-র আমলে ঢাকায়। বাদশা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে তিনি বাংলার সুবাদার হিসাবে ঢাকায় আসেন। তখন নদীমাতৃক বাংলায় রাজ্যশাসন ও বন্যা মোকাবিলার জন্য এক বিশাল নৌবাহিনী রাখা হতো। তাই নদীর পীর বা দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতি বছর ভরা নদীর বুকে খোয়াজ খিজিরের সন্মানে এক বর্ণময় আলোক উৎসব ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হতো। এই উৎসবকে বেরা উৎসব তখনও বলা হতো। 'বেরা' একটি পারসি শব্দ, যার অর্থ মহৎ উদ্দেশ্যে নৌপথে যাত্রা। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত বেরা উৎসব হয়ে আসছে।

{ তথ্য সংগ্রহ : দীননাথ মণ্ডল }


শেয়ার করুন

3 comments: