'সোঁদামাটি' সাহিত্য পত্রিকা ও 'ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ' ফেসবুক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে এই ওয়েবসাইট।

নবাবী আমলের টাঁকশাল


নবাবী আমলে মুর্শিদাবাদে টাঁকশাল ছিল। মুদ্রা তৈরির কারখানাকে বাংলায় টাঁকশাল, ইংরেজিতে মিন্ট্ (mint) বলে। কিন্তু টাঁকশালটি কোথায় ছিল সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন টাঁকশালটি প্রথমে ছিল নদীর ওপারে ইচ্ছাগঞ্জের ঠিক বিপরীত দিকে। পরে সেখান থেকে সরিয়ে আনা হয়েছিল ইমামবারার কাছে। সেই টাঁকশালের জায়গায় বর্তমান ইমামবারার পশ্চিমাংশ নির্মাণ করা হয়েছিল। সামনের বাঁধা ঘাট- যার নাম মিন্টঘাট তাকেই  টাঁকশালের প্রমাণ হিসাবে তারা উত্থাপন করেন। আবার কেউ কেউ বলেন টাঁকশাল দেখাশোনার দায়িত্ব যেহেতু জগৎশেঠের উপর ছিল, সেহেতু টাঁকশালটি ছিল জগৎশেঠদের বাড়ির কাছাকাছি। বর্তমানে জগৎশেঠদের সেই বাড়ি নদী গর্ভে। নবাবী আমলে জগৎশেঠ পরিবার সোনা- চাঁদির একচেটিয়া কারবার করতেন এবং নবাবকে সরবরাহ করতেন। তার জন্য তারা বাট্রা ও কমিশন পেতেন। 


যে কেউ সোনা রূপো কিনে নবাবী টাঁকশাল থেকে মোহর বা টাকা তৈরি করে নিলে তাকে কমিশন দিতে হতো। সেই কমিশনের কিছু অংশ জগৎশেঠও পেতেন। ইংরেজ, ফরাসি, ডাচ কুঠির সাহেবরাও নবাবী টাঁকশাল থেকে টাকা তৈরি করিয়ে নিতেন। ১৭২৫ সালে মুর্শিদাবাদের টাঁকশাল থেকে মিন্ট্ ডিউটি বা টাঁকশালের কমিশন বাবদ ছয় লক্ষ টাকা আদায় হয়েছিল। বছর বছর এর চেয়েও বেশি নবাব পেতেন। 

বাদশা ঔরঙ্গজেবের নাম দিয়ে তৈরি মুর্শিদাবারে টাঁকশালের টাকা এখনও পাকিস্তানের লাহোর মিউজিয়ামে আছে। দ্বিতীয় শাহ আলম-এর রাজত্বের দশ,  এগারো ও উনিশ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ১৭৬৮, ১৭৬৯ ও ১৭৭৭ সালে তাঁর নামাঙ্কিত মুর্শিদাবাদের টাঁকশাল থেকে দেশীপ্রথায় অনেক মোহর বা টাকা তৈরি করা হয়েছিল। মোহরের একপিঠে থাকত ফার্সি ভাষায় লেখা  বাদশার নাম এবং অপর পিঠে লেখা থাকত "জবরে মুর্শিদাবাদ" বা "জলুষ ১৯"। এই ছাঁচ আর বদলানো হয়নি। ১৭৯৩ সালে বাংলার রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তরিত হলে মুর্শিদাবাদের টাঁকশাল বন্ধ হয়ে যায়। এলাহিগঞ্জের এক ভাঙা ঢিপি খুঁড়তে গিয়ে  সাঁওতাল কুলীরা মুর্শিদাবাদের টাঁকশালের তৈরি এক হাঁড়ি মোহর পেয়েছিল, তার ৬৫টি মোহর রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে এখনও আছে।


শেয়ার করুন

1 comment:

  1. বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
    অজানা ছিল।

    ReplyDelete